বিসিডি কোড (BCD Code) বা Binary-Coded Decimal হলো একটি পদ্ধতি যেখানে দশমিক সংখ্যাগুলিকে বাইনারি আকারে প্রকাশ করা হয়, কিন্তু প্রতিটি দশমিক সংখ্যা (০-৯) আলাদা করে ৪-বিট বাইনারি কোডে পরিবর্তিত হয়। এটি ডিজিটাল সিস্টেম এবং কম্পিউটারে সংখ্যার ইনপুট, আউটপুট, এবং গাণিতিক অপারেশন সহজে সম্পাদন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
BCD (Binary-Coded Decimal) এর বৈশিষ্ট্য:
১. ডিজিট-ওরিয়েন্টেড পদ্ধতি:
- BCD পদ্ধতিতে প্রতিটি দশমিক সংখ্যা (০ থেকে ৯) একটি ৪-বিট বাইনারি সংখ্যা (নিবল) হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
- উদাহরণ: দশমিক সংখ্যা ৫ হলো BCD পদ্ধতিতে 0101 এবং ৯ হলো 1001।
২. আলাদা ডিজিট এনকোডিং:
- প্রতিটি দশমিক ডিজিটকে আলাদা করে বাইনারি আকারে এনকোড করা হয়। এইভাবে, বড় সংখ্যাকে আলাদা ডিজিটে বিভক্ত করে বাইনারি রূপান্তর করা যায়।
- উদাহরণ: দশমিক সংখ্যা 25 BCD পদ্ধতিতে হবে 0010 0101 (২ এবং ৫ আলাদাভাবে এনকোড করা হয়েছে)।
৩. সহজ এবং সরল গাণিতিক অপারেশন:
- BCD পদ্ধতিতে গাণিতিক অপারেশন সহজ, কারণ প্রতিটি দশমিক সংখ্যাকে আলাদা করে বাইনারি আকারে এনকোড করা হয়েছে। তাই গাণিতিক কাজ করার সময় প্রতিটি ডিজিট সরাসরি প্রক্রিয়াকরণ করা যায়।
- এটি বিশেষ করে প্রাথমিক ডিজিটাল ক্যালকুলেটর এবং মাইক্রোকন্ট্রোলারগুলোতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে সংখ্যাগুলোর দশমিক ফর্ম বজায় রেখে কাজ করা প্রয়োজন।
BCD পদ্ধতির উদাহরণ:
ধরা যাক, আমাদের দশমিক সংখ্যা 345 কে BCD পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে হবে:
- 3 এর বাইনারি কোড: 0011
- 4 এর বাইনারি কোড: 0100
- 5 এর বাইনারি কোড: 0101
তাহলে, BCD কোড হবে: 0011 0100 0101
BCD পদ্ধতির সুবিধা:
১. সহজ এনকোডিং এবং ডিকোডিং:
- BCD পদ্ধতিতে দশমিক সংখ্যাগুলি সরাসরি বাইনারি কোডে রূপান্তর করা যায়, তাই ইনপুট এবং আউটপুট প্রক্রিয়াকরণ সহজ হয়।
২. ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং ক্যালকুলেটরের জন্য উপযোগী:
- ডিজিটাল ক্যালকুলেটর এবং ডিসপ্লেতে BCD পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, কারণ এতে সংখ্যাগুলোর প্রতিটি ডিজিট আলাদাভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা যায় এবং ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করা সহজ হয়।
৩. কম্পিউটার সিস্টেমের নির্ভুলতা বজায় রাখা:
- BCD পদ্ধতিতে প্রতিটি দশমিক সংখ্যা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তাই ত্রুটি বা সংখ্যা হেরফেরের সম্ভাবনা কম থাকে।
BCD পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা:
১. বেশি মেমোরি ব্যবহার:
- BCD পদ্ধতিতে প্রতিটি দশমিক ডিজিটকে ৪-বিট হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়, যা অনেক বেশি মেমোরি ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৮-বিট বাইনারি সংখ্যা ০ থেকে ২৫৫ পর্যন্ত মান ধারণ করতে পারে, কিন্তু BCD পদ্ধতিতে এটি মাত্র ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত মান ধারণ করতে পারে।
২. অপ্টিমাইজড নয়:
- গাণিতিক অপারেশন BCD পদ্ধতিতে ডিজিট বাই ডিজিট সম্পাদন করা হয়, যা অন্যান্য বাইনারি অপারেশনের তুলনায় ধীর হতে পারে।
৩. বিকল্প পদ্ধতি বিদ্যমান:
- আধুনিক ডিজিটাল সিস্টেমে BCD পদ্ধতির পরিবর্তে, পিওর বাইনারি এবং অন্যান্য এনকোডিং পদ্ধতি (যেমন, IEEE-754) ব্যবহৃত হয়, যা বেশি কার্যকর এবং কম মেমোরি খরচ করে।
BCD পদ্ধতির ব্যবহার:
- ডিজিটাল ক্যালকুলেটর: দশমিক সংখ্যার সঙ্গে কাজ করার জন্য BCD পদ্ধতি উপযোগী। এটি ইনপুট এবং আউটপুট উভয় ক্ষেত্রেই সহজে ব্যবহার করা যায়।
- ডিজিটাল ঘড়ি: সময় প্রদর্শনের জন্য BCD পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, কারণ এতে প্রতিটি সংখ্যার ডিজিটকে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- মাইক্রোকন্ট্রোলার এবং এম্বেডেড সিস্টেম: বিশেষত, যেখানে নির্দিষ্ট দশমিক সংখ্যার সঙ্গে কাজ করতে হয়, সেখানে BCD পদ্ধতি কার্যকরী।
সারসংক্ষেপ:
BCD (Binary-Coded Decimal) হলো একটি সংখ্যার এনকোডিং পদ্ধতি, যা দশমিক সংখ্যাগুলিকে ৪-বিট বাইনারি আকারে এনকোড করে। এটি সহজ এবং সরল, বিশেষ করে ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং ক্যালকুলেটরের জন্য উপযোগী। তবে এর মেমোরি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতার কারণে আধুনিক ডিজিটাল সিস্টেমে পিওর বাইনারি এবং অন্যান্য পদ্ধতির বেশি ব্যবহার দেখা যায়।